শায়েরি, হাইকু, তানকার সুর
কবিতা তো আইসবার্গের মতোই। দশভাগের একভাগ দেখা যায় বাকী নয় ভাগ থাকে অতলে, গহীনে। অতল মনের কাব্যে আমরা সেই গভীরতা পাই।
‘চিতায় জ্বলে জ্বলে শুদ্ধ হয়েছে স্মৃতি
হৃদয় থেকে উঠিয়ে মস্তিষ্কে রেখেছি’
‘আকাশ দিগন্ত রেখায় সমস্ত নীল ঢেলে যায়
এতে আকাশের নীল কমেনি কখনো’
এই সব পঙ্ক্তিমালার সুগভীর মর্ম রয়ে গেছে। লক্ষণীয় যে, জামিলের কবিতার গভীর কথাগুলো উপস্থাপিত হয় ভীষণ সরলতায়। ‘সহজ কথা যায় বলা সহজে’সহজ করে বলার দুরহ কাজটি তিনি অনায়াসেই সেরে ফেলেন। আধুনিক কবিতার কথিত আঙ্গিকের জটিলতা, তত্তের ভার তার কবিতায় নেই। বোধ, অনুভ‚তির সরল প্রকাশেই তিনি ঋদ্ধ-
‘খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত এই মন
যখন অরণ্যে শুয়েছিলো ঝরানো পাতায়
ছায়াপথ থেকে কেউ এসে বলে
‘এই আমি! হৃদয়ের কাছে!
যুগ যুগ ধরে তোমার প্রেমের উৎস!’
কোনো কবিই তার সমসময় থেকে বেরুতে পারেন না বোধহয়। সমকাল ছুঁয়েই কবি চিরন্তনের পথে হাঁটেন।
‘এই পাগল করা কর্মব্যস্ততা
এখন মান-অভিমানের সময় নেই
কে কাকে মনে রাখে, কাকে যে ভুলে যায়
এখন মরণেরও সময় নেই’
নাগরিক ব্যস্ততা আর জীবনযাপনের রুঢ় বাস্তবতার ভিড়ে মান-অভিমান সরিয়ে রাখাই তাই তার কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে। কর্ম ব্যস্ততার ফাঁদে তার প্রেম প্রায়শই আটকা পড়ে যায়। প্রেমিক কবি সেই জন্যে অনুশোচনা করেন
‘কর্ম ব্যস্ততায় তোমাকে মনে করিনি
অনেকদিন। তুমিও আমার কোনো খোঁজ নাওনি।
বহুদিন আমাদের দেখাও হয় না
তাই প্রতিশ্রুত নিত্য প্রেমের কবিতা
লেখা হয়নি অনেকদিন।
ক্ষমা করো, ক্ষমা করে দিও।’
শায়েরি, হাইকু বা তানকার মতো তার কবিতাতেও আমরা রস, বুদ্ধি আর অভিমানের বিদ্যুৎ ঝিলিক দেখি। সেই সব ঝিলিক আকস্মিক, কিন্তু জোরালো ও সুদুরপ্রসারী। কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা যাক
‘অভিমান করে করে লোকসান বাড়ে
তুমি কি হিসাব করা ভুলে গেছো?’
‘তুমিই না করো
আবার তুমিই দিতে বলো
দিলেই আবার রাগ করো
কোন দিকে যাই বলো’
কালিদাসের কাল থেকেই কবিতায় বর্ষা যুগে যুগে আঁচড় ফেলা যায়। বৃষ্টি আর মেঘ আসে আব্দুল্লাহ্ জামিলের কবিতায়। দীর্ঘস্থায়ী বা খুব ভারী নয়, তার কবিতার মতো এখানে বৃষ্টি ও মেঘ মৃদু, স্বল্পভাষী তবু বাঙময়।
‘আবারও বর্ষাকাল এলো
প্রতিবছরই ফিরে আসে
মাঝে অতিক্রান্ত হয় পাঁচ ঋতু
এভাবেই বার বার ঘুরে ফিরে আসে
কিছু আনন্দ ও দুঃখবোধ
এভাবেই চলে প্রতিটি বর্ষাযাপন’
‘আকাশ জুড়ে বালক মেঘেরা খেলছে
অথচ জানে না একটু পরেই ওরা কান্না হয়ে
অঝোর ধারায় ঝরে যাবে।’
বাংলাদেশও জামিলের কবিতার মানচিত্রে ধরা পড়ে। প্রিয়তমা আর বাংলাদেশ একাকার হয়ে ওঠে তার কবিতায়। দেশ প্রেম আর নারী প্রেম একই সমতলে চলে আসে কবির বয়ানে
‘প্রিয়া, তোমার কপালে লাল টিপ
পরনে সবুজ রং শাড়ি
বিজয় দিবসে ধারণ করছো দেশ
তোমাদের আমি ভালোবাসি।’
বিষয় যাই হোক, জামিল তার কবিতায় অতলের সন্ধান করেন। সে অতল কখনো মগজে, কখনো মনে, কখনো বাস্তবে, কখনো পরাবাস্তবে ঠাঁই করে নেয়। তার অতল অনুসন্ধানী মন গেয়ে ওঠে-
‘এক অতল ঘুমের গভীরে নিয়ত ডুবে যাই
ঘুমের কি কোনো রং হয়?
লাল নীল হলুদ কিংবা সবুজ?
মানুষ নাকি রঙিন স্বপ্ন দেখে
স্বপ্ন ও ঘুমের রঙের ব্যবধান বুঝি না।’
পাঠক, স্বপ্ন, ঘুম, জাগরণের নানা রঙের অতল জগতে মন ডোবাতে চাইলে পৃষ্ঠা উল্টান, ভ্রমণ করুণ আব্দুল্লাহ্ জামিলের কাব্য জগতে।
শায়েরি, হাইকু, তানকার সুর
কবিতা তো আইসবার্গের মতোই। দশভাগের একভাগ দেখা যায় বাকী নয় ভাগ থাকে অতলে, গহীনে। অতল মনের কাব্যে আমরা সেই গভীরতা পাই।
By আব্দুল্লাহ্ জামিল
Category: কবিতা
শায়েরি, হাইকু, তানকার সুর
কবিতা তো আইসবার্গের মতোই। দশভাগের একভাগ দেখা যায় বাকী নয় ভাগ থাকে অতলে, গহীনে। অতল মনের কাব্যে আমরা সেই গভীরতা পাই।
‘চিতায় জ্বলে জ্বলে শুদ্ধ হয়েছে স্মৃতি
হৃদয় থেকে উঠিয়ে মস্তিষ্কে রেখেছি’
‘আকাশ দিগন্ত রেখায় সমস্ত নীল ঢেলে যায়
এতে আকাশের নীল কমেনি কখনো’
এই সব পঙ্ক্তিমালার সুগভীর মর্ম রয়ে গেছে। লক্ষণীয় যে, জামিলের কবিতার গভীর কথাগুলো উপস্থাপিত হয় ভীষণ সরলতায়। ‘সহজ কথা যায় বলা সহজে’সহজ করে বলার দুরহ কাজটি তিনি অনায়াসেই সেরে ফেলেন। আধুনিক কবিতার কথিত আঙ্গিকের জটিলতা, তত্তের ভার তার কবিতায় নেই। বোধ, অনুভ‚তির সরল প্রকাশেই তিনি ঋদ্ধ-
‘খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত এই মন
যখন অরণ্যে শুয়েছিলো ঝরানো পাতায়
ছায়াপথ থেকে কেউ এসে বলে
‘এই আমি! হৃদয়ের কাছে!
যুগ যুগ ধরে তোমার প্রেমের উৎস!’
কোনো কবিই তার সমসময় থেকে বেরুতে পারেন না বোধহয়। সমকাল ছুঁয়েই কবি চিরন্তনের পথে হাঁটেন।
‘এই পাগল করা কর্মব্যস্ততা
এখন মান-অভিমানের সময় নেই
কে কাকে মনে রাখে, কাকে যে ভুলে যায়
এখন মরণেরও সময় নেই’
নাগরিক ব্যস্ততা আর জীবনযাপনের রুঢ় বাস্তবতার ভিড়ে মান-অভিমান সরিয়ে রাখাই তাই তার কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে। কর্ম ব্যস্ততার ফাঁদে তার প্রেম প্রায়শই আটকা পড়ে যায়। প্রেমিক কবি সেই জন্যে অনুশোচনা করেন
‘কর্ম ব্যস্ততায় তোমাকে মনে করিনি
অনেকদিন। তুমিও আমার কোনো খোঁজ নাওনি।
বহুদিন আমাদের দেখাও হয় না
তাই প্রতিশ্রুত নিত্য প্রেমের কবিতা
লেখা হয়নি অনেকদিন।
ক্ষমা করো, ক্ষমা করে দিও।’
শায়েরি, হাইকু বা তানকার মতো তার কবিতাতেও আমরা রস, বুদ্ধি আর অভিমানের বিদ্যুৎ ঝিলিক দেখি। সেই সব ঝিলিক আকস্মিক, কিন্তু জোরালো ও সুদুরপ্রসারী। কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা যাক
‘অভিমান করে করে লোকসান বাড়ে
তুমি কি হিসাব করা ভুলে গেছো?’
‘তুমিই না করো
আবার তুমিই দিতে বলো
দিলেই আবার রাগ করো
কোন দিকে যাই বলো’
কালিদাসের কাল থেকেই কবিতায় বর্ষা যুগে যুগে আঁচড় ফেলা যায়। বৃষ্টি আর মেঘ আসে আব্দুল্লাহ্ জামিলের কবিতায়। দীর্ঘস্থায়ী বা খুব ভারী নয়, তার কবিতার মতো এখানে বৃষ্টি ও মেঘ মৃদু, স্বল্পভাষী তবু বাঙময়।
‘আবারও বর্ষাকাল এলো
প্রতিবছরই ফিরে আসে
মাঝে অতিক্রান্ত হয় পাঁচ ঋতু
এভাবেই বার বার ঘুরে ফিরে আসে
কিছু আনন্দ ও দুঃখবোধ
এভাবেই চলে প্রতিটি বর্ষাযাপন’
‘আকাশ জুড়ে বালক মেঘেরা খেলছে
অথচ জানে না একটু পরেই ওরা কান্না হয়ে
অঝোর ধারায় ঝরে যাবে।’
বাংলাদেশও জামিলের কবিতার মানচিত্রে ধরা পড়ে। প্রিয়তমা আর বাংলাদেশ একাকার হয়ে ওঠে তার কবিতায়। দেশ প্রেম আর নারী প্রেম একই সমতলে চলে আসে কবির বয়ানে
‘প্রিয়া, তোমার কপালে লাল টিপ
পরনে সবুজ রং শাড়ি
বিজয় দিবসে ধারণ করছো দেশ
তোমাদের আমি ভালোবাসি।’
বিষয় যাই হোক, জামিল তার কবিতায় অতলের সন্ধান করেন। সে অতল কখনো মগজে, কখনো মনে, কখনো বাস্তবে, কখনো পরাবাস্তবে ঠাঁই করে নেয়। তার অতল অনুসন্ধানী মন গেয়ে ওঠে-
‘এক অতল ঘুমের গভীরে নিয়ত ডুবে যাই
ঘুমের কি কোনো রং হয়?
লাল নীল হলুদ কিংবা সবুজ?
মানুষ নাকি রঙিন স্বপ্ন দেখে
স্বপ্ন ও ঘুমের রঙের ব্যবধান বুঝি না।’
পাঠক, স্বপ্ন, ঘুম, জাগরণের নানা রঙের অতল জগতে মন ডোবাতে চাইলে পৃষ্ঠা উল্টান, ভ্রমণ করুণ আব্দুল্লাহ্ জামিলের কাব্য জগতে।